কোডিং এবং প্রোগ্রামিং থেকে অর্থ উপার্জনের ৪ টি উপায় সম্পর্কে জেনে নিন!
বাসায় বসে অলস সময় না কাটিয়ে আপনি যদি কোডিং থেকে অর্থ উপার্জন করতে চান তাহলে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে প্রোগ্রামিং থেকে অর্থ উপার্জনের নানাবিধ উপায় রয়েছে। আপনি প্রোগ্রামিং দক্ষতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করে থাকলে তা করার বেশকিছু উপায় রয়েছে। উপায়গুলো হয়ত আপনার হাতের নাগালেই রয়েছে কিন্তু আপনি তা নিয়ে সিরিয়াসলি ভেবে দেখেন নি। প্রথমত প্রোগ্রামিং শিখতে হলে নিজের পছন্দমত ভাষায় কোডিং এবং প্রোগ্রামিং শিখতে হবে। এরজন্য বেশকিছু ট্রাস্টেড ওয়েবসাইট রয়েছে। তারপর প্রোগ্রামিং ও কোডিং এ দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি অর্থ আয়ের জন্য রয়েছে কিছু চমৎকার উপায়। এই উপায়গুলো নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে। চলুন দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক প্রোগ্রামিং এবং কোডিং থেকে আয়ের ৪ টি উপায় সম্পর্কে।
১. অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিং কখনও কখনও হতাশাজনক মনে হতে পারে। কিন্তু উপযুক্ত অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম, সঠিক মানসিকতা এবং মার্কেটিং দক্ষতার সাথে, আপনি নিয়মিত কোডিং এবং প্রোগ্রামিং করতে পারেন। এরজন্য প্রয়োজন হবে সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করা, মার্কেটপ্লেস এ বিড করে কাজ নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করা। ফাইবার, লিংকেডিন, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে আকর্ষনীয় প্রোফাইল গিগ তৈরি করা যাতে ক্লায়েন্টরা অন্য সবার চেয়ে আপনাকে যোগ্য মনে করে। আগে করা কাজের অভিজ্ঞতা, কাজের কিছু নমুনা প্রোফাইলে রাখুন, কিছু ছোট ছোট ভিডিও টিউটোরিয়াল শেয়ার করুন। এতে করে অন্যরা আপনার ব্যাপারে জানতে পারবে, এবং প্রয়োজনে আপনাকে হায়ার করবে। এছাড়া স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিজের স্কিল নিয়মিত শেয়ার করুন,পরিচিতি বাড়ান। এটা সময়সাপেক্ষ হলেও অবশ্যই তা কাজে দিবে। একবার মার্কেটপ্লেসে পরিচিতি পেয়ে গেলে তখন কাজের অভাব হবেনা। যেহেতু প্রোগ্রামিং কঠিন কাজ, তাই অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং কাজের চেয়ে এক্ষেত্রে আপনাকে তুলনামূলক কম প্রতিযোগিতা করতে হবে।
২. অনলাইন প্রোগ্রামিং টিউটোরিয়াল
অনেকেই কোডিং শিখতে আগ্রহী এবং এজন্য তারা দক্ষ শিক্ষককে অর্থ দিতে দ্বিধা করবেন না। তাই আপনি নিজে কোডিং এবং প্রোগ্রামিং শিখে দীর্ঘ এবং সংক্ষিপ্ত টিউটোরিয়াল ভিডিও অনলাইনে আপলোড করে কোডিং থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন যা অর্থ আয়ের একটি স্মার্ট উপায়। Udemi এর মতো লার্নিং প্ল্যাটফর্ম হল এমন জায়গা যেখানে টিউটররা বিনামূল্যে শিক্ষণ অ্যাকাউন্ট তৈরি করে, কোর্স আয়োজন করে এবং তাদের অডিয়েন্সদের কাছে অর্থের বিনিময়ে কোর্সগুলো বিক্রয় করে। নতুন এবং সিনিয়র প্রোগ্রামারও কোডিং সমস্যা সমাধানের জন্য ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মের আশ্রয় নেয়। এই শিক্ষণ প্ল্যাটফর্মগুলির অধিকাংশই চাকরির মত সুযোগও প্রদান করে থাকে। আপনি যদি দুর্দান্ত প্রচেষ্টা করেন এবং আপনার কাজগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে করতে সফল হন তবে আপনি অডিয়েন্স তৈরি করতে পারবেন এবং অর্থ আয় করতে শুরু করবেন। অনলাইন টিউটরিং প্ল্যাটফর্মের জন্য ভাল মাইক্রোফোনের প্রয়োজন হয় যার জন্য প্রাথমিকভাবে কিছুটা খরচ হতে পারে। তবে ইউটিউব চ্যানেল সেট আপ করতে এবং ভিডিও পোস্ট করা শুরু করতে কোন খরচ নেই। অনলাইনে আপনার ভিডিও প্রকাশ করা শুরু করার জন্য আপনার বাড়তি ক্যামেরার প্রয়োজন নেই। শুরুর জন্য আপনার যা দরকার তা হল একটি দক্ষ স্ক্রিন রেকর্ডার এবং ভাল ভয়েস কোয়ালিটির একটি মাইক্রোফোন। যাইহোক, আপনি অর্থ উপার্জন শুরু করার পর আরো অত্যাধুনিক স্ট্রিমিং সরঞ্জাম ক্রয় করতে পারেন।
৩.এন্টারপ্রাইজ অ্যাপস এবং API অ্যাপস
এন্টারপ্রাইজ
অ্যাপস এবং এপিআই তৈরি করা একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ হতে পারে, কিন্তু অ্যাপ উদ্ভাবনে
আপনার সময় ব্যয় করা পরবর্তীতে আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি আয় করার
জন্য এটা খুবই দারুন আশাব্যঞ্জক উপায়। তবে এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ এবং API অ্যাপ উন্নয়ন
সফল করতে এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে সেগুলি
জনপ্রিয় করতে, API এবং এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশনগুলতে অবশ্যই কিছু বিশেষ সমস্যার সমাধান
করার ফিচার এবং অপশন থাকতে হবে অন্যথায়, এটি মূল্যহীন হয়ে পড়বে। যদিও বেশিরভাগ
API অ্যাপগুলো ওপেন সোর্স থেকে ডাউনলোড করা যায় তবে কিছু কিছু ব্যবহারকারীরা নিরাপত্তা
বৃদ্ধির জন্য প্রিমিয়াম ভার্সন ব্যবহারে আগ্রহী থাকে।
যখন
আপনি প্রাথমিক অবস্থায় কোন অ্যাপ চালু করবেন, মনে রাখবেন এটি শুরুতেই জনপ্রিয়তা পাবেনা।
সুতরাং প্রথমেই প্রিমিয়াম ভার্সন চালু না করে
ব্যবহারকারীদের জন্য বিনামূল্যে ফিচার রাখুন। বিনামূল্যে ট্রায়াল শুরু করার
পর যখন অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে যাবে তখন উন্নত ফিচারের জন্য চার্জ
প্রযোজ্য করতে পারেন।
যেহেতু আপনি ডেভেলপার এবং আপনার জন্য কাজটি করার জন্য আপনাকে কাউকে অর্থ প্রদান করতে হবে না। API এবং এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশনগুলির উন্নয়ন পর্যায়ে আপনার কোন অর্থ ব্যয় হবে না। তবে এপ্লিকেশনের প্রচারের সুবিধার্থে বিজ্ঞাপনের জন্য আপনার কিছু অর্থ ব্যয় করতে হবে। এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ এবং API অ্যাপগুলো যদি কার্যকর হয় এবং ব্যবহারকারীদের নিকট পছন্দনীয় হয় তবে আপনার ব্যয়কৃত অর্থের বহুগুন আপনি ফেরত পাবেন, তাই নির্দিধায় প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করতে পারেন। আপনার এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ প্রোমোট করার একটি উপায় হল বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেওয়া। ব্যবহারকারীরা একবার আপনার অ্যাপটি ব্যবহার শুরু করলে এটি থেকে অর্থ উপার্জন করার জন্য, আপনি ফ্রি এবং প্রিমিয়াম দুই ধরনের ফিচারই অ্যাপে রাখতে পারেন।
৪. কোডিং সম্পর্কে ব্লগ
আপনি যদি লেখার মাধ্যমে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি কোডিং সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করে এমন বিষয়গুলিতে ব্লগ পোস্ট লিখে ব্লগিং শুরু করতে পারেন। প্রোগ্রামার হিসাবে অন্যদের সাথে সবসময় যুক্ত থাকা এবং নিজের কোডিং এবং প্রোগ্রামিং দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রোগ্রামিং সম্পর্কে ব্লগিং একটি চমৎকার উপায়। যদিও ব্লগ লিখে আয় করাটা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, তারপরেও চেষ্টা করা উচিত, বিশেষ করে যদি আপনার লেখার প্রতি আগ্রহ এবং লেখার মান ভাল হয়ে থাকে। সরাসরি আয় করার পাশাপাশি কোডিং সম্পর্কে লেখা অনলাইনে অন্যান্য প্রোগ্রামারদের তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। এতে করে প্রোগ্রামার হিসেবে আপনার পরিচিতিও বাড়বে যা বিভিন্ন ক্লায়েন্ট থেকে কাজ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। অনলাইনে কোডিং আর্টিকেল লেখার জন্য আপনাকে একটি ব্লগের মালিক হতে হবে না। কিছু বিদ্যমান ব্লগের মালিকরা তাদের ব্লগে প্রোগ্রামিং এবং কোডিং সম্পর্কে ব্লগ লেখার জন্য আপনাকে অর্থ প্রদান করতে ইচ্ছুক। একবার আপনি আপনার প্রযুক্তিগত লেখার দক্ষতা এবং লেখার মাধ্যমে জটিল বিষয়গুলিকে সহজ করে উপস্থাপন করে পাঠকদের কাছে আস্থা অর্জন করতে পারলে এটা প্রোগ্রামিং এবং কোডিং এর উপর আপনার ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করবে।
শেষ কথা
ফ্রিল্যান্সিং করে সাবলম্বী হওয়া এবং স্থায়ী পেশা হিসেবে গ্রহন করাটা এখন অসম্ভব নয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি, স্যোশাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন, ব্লগিং, ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে নিজের পরিচিতি বৃদ্ধি এবং অন্যদের কাছে আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারলে প্রোগ্রামিং এ ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব। প্রোগ্রামিং এবং কোডিং অপেক্ষাকৃত কঠিন বিষয় হওয়ায় অনেকেই এই বিষয়ে শিখতে আগ্রহী নয়। তাই এই বিষয়ে ক্যারিয়ার গঠনে কম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবেন। অন্যদের নিকট প্রোগ্রামিং এবং কোডিংকে সহজ হিসেবে উপস্থাপন করে কোডিং এবং প্রোগ্রামিং নিয়ে দলগতভাবে কাজ শুরু করতে পারেন যা পরবর্তীতে বৃহৎ কোম্পানিতে রুপ নিতে পারবে। আশা করি প্রোগ্রামিং থেকে অর্থ উপার্জনের উপায়গুলো আপনাদের উপকারে আসবে। এরকম আরও কোন বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা অবশ্যই পরবর্তীতে আপনাদের পছন্দের কোন বিষয় নিয়ে আবার হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।

0 Comments